Description
ঘরের কোণে চৌকিতে শুয়ে ভীষণ জ্বরে কাঁপছে একটা ছোট্ট শিশু। সঙ্গে বেদম কাশি। মাথার কাছে বসে ঠাকুরমা মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন ঘন ঘন। কিছু ক্ষণ পর পর মা এসে দিয়ে যাচ্ছেন মধু, তাল মিছরি, দারুচিনির সঙ্গে বাসকপাতা ফুটিয়ে ছেঁকে নেওয়া পানীয়। ঠাকুরমার নির্দেশে ছোট্ট শিশুটিকে চিবিয়ে খেতে হচ্ছে একটা উৎকট স্বাদ-গন্ধ যুক্ত কাঁচা নিসিন্দা পাতা।
সে সময় জ্বর হলেই প্যারাসিটামল বা কাশি হলে কাফ সিরাপ এত সহজলভ্য ছিল না গ্রামের মানুষের কাছে। তাঁরা ওষুধে এত অভ্যস্তও ছিলেন না। জ্বর-জ্বালা হলে বাড়ির আশপাশের গাছগাছালিই ছিল মানুষের সুস্থ হয়ে ওঠার মূল ভরসা। ঔষধি গুনে ভরা কালমেঘ, ঘৃতকুমারি, তেলাকুচো, পলতা, আকন্দ, বৈচি, থানকুনি, কুলেখাড়া, ব্রাহ্মি, কলমি, হ্যালেঞ্চার মতো কতশত নাম জানা, না জানা গুল্ম, বৃক্ষ, শাক গ্রামবাংলার পথঘাটে ছড়িয়েছিটিয়ে ছিল তখন। এখন যাদের অনেকগুলোই হারিয়ে গিয়েছে বা হারিয়ে যেতে বসেছে। তাদের গুণাগুণ সম্বন্ধেও সচেতন নয় বর্তমান প্রজন্ম। এই যেমন ঘুসঘুসে জ্বরে নিসিন্দা পাতা, সর্দি কাশিতে বাসক, তুলসিপাতা তো আছেই। রক্তাল্পতায় কুলেখাড়া, বুদ্ধি বিকাশে ব্রাহ্মি, অনিদ্রায় শুষনিশাকের ব্যবহার তো অতি পরিচিত। কৃমির জন্য সাত সকালে কাঁচা কালমেঘ পাতা, আনারস পাতার রস তো মহৌষধ বলে মনে করা হয় এখনও। পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা, গাঁদাল পাতা ব্যবহারে ভালোফল মেলে। কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করতে বন তুলসি, পাথর কুচি, গাঁদা বা কচার আঠা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেওয়া— এ সব তো খুব চেনা ছিল ছোটবেলায়।
বেশ কিছুদিন আগেও সাত সকালে নিম, কচা বা বাড়ির পাশে ঝোপ হয়ে থাকা আশশেওড়ার ডাল দিয়েই দাঁত মাজতেন গ্রামবাংলার মানুষ। ভ্যারান্ডা, জীবলি বা পলতা মাদার গাছের ডাল দিয়ে বাড়ির বেড়া দেওয়া তো খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল একটা সময়। চৈত্র মাসে টানের সময়ে সেই ডাল পুঁতলে তার থেকে সহজেই শিকড় বেরিয়ে গাছ হয়ে যেত। এখন তো জীবলি বা পলতা মাদার গাছ প্রায় চোখেই পড়ে না। জংলি গাছগুলোর মধ্যে দাদমর্দন, পলতা মাদার (পারিজাত), কেওকন্দর মতো বেশ কিছু গাছের ফুল এত সুন্দর দেখতে যে, তাদের বাহারি গাছ হিসেবেও বাড়িতে লাগানো যেতেই পারে। চাকুন্দা, দাদমর্দন গাছের রস চর্মরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার রেওয়াজ আছে। এমনকি, গায়ে লাগলেই গা চুলকায় যে বিছুটি গাছকে আমরা এড়িয়ে চলি সেই গাছও চর্মরোগ, প্রস্রাবের সমস্যা, মাথাব্যথা, হাঁপানিতে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
Reviews
There are no reviews yet.