Description
বাবা! এই শব্দটা শুনলেই মিশ্র অনুভুতির জন্ম নেয় মনের মধ্যে। কিছুটা ভয়, কিছুটা ভালবাসা, কিছুটা মনোমালিন্য আর অনেকটা ভরসা। কোনও দুষ্টুমি করলেই মায়ের কাছে কাকুতিমিনতি, যে বাবা এলে যেন বলে না দেওয়া হয়। অথচ মেয়েরা যখন বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি চলে যায়, এই লোকটাই চোখের জল চেপে কোন এক অন্ধকার ঘরে লুকিয়ে বসে থাকে! ছেলে যখন আমেরিকায় গবেষণার সুযোগ পায়, অফিসে এই লোকটার মাথা গর্বে উঁচু হয়ে যায়।
ঈশ্বর জানেন যে সন্তানের জন্যে মা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এই দুজনের খেয়াল রাখার জন্যে আরো একজন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ… তাই তিনি “বাবা”দেরকেও পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। বাবারা সারাটা জীবন নিজের সন্তানের জন্যে নিজের জীবনটা বিলিয়ে দেন , কিন্তু হয়তো তারা সেই অর্থে মায়েদের মতো চর্চিত হন না। যুগে যুগে সর্বস্থানে মাতৃবন্দনা হলেও পিতৃবন্দনা সাধারনতঃ দেখা যায় না। পিতৃবন্দনা, পিতারা আশাও করে না। সন্তানের প্রতি ভালোবাসা কোনো পিতা হয়তো প্রকাশ করতে পারে না, তবে কোনো পিতা কখনোই সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্ব পালনে বিচ্যুত হয় না।
বাবার হলেন অসাধারন এক লালনকর্তা, পালনকর্তা এবং প্রয়োজনের নীরব যোগানদাতা। আসলে সব বাবাই এক শীতল ছায়াদায়ী বৃক্ষ। বৃক্ষ যেমন ছায়া দেয়, ফল দেয়, জ্বালানী দেয়, কাঠ দেয়, দেয় বাঁচার জন্য অক্সিজেন…তেমনি বাবাও দেন ছায়া, দেন প্রয়োজনের ফল-জ্বালানী-কাঠের যোগান। দেন সমাজে মাথা উচু করে বাঁচার, আত্ম পরিচয়ের অক্সিজেন। বাবা মাত্রই বিশেষায়িত। সেটা আমার হোক কিংবা অন্যের।
যেকোনো মানুষের জীবনের বাবা-মা এর ভূমিকা অনস্বীকার্য । মা এর ভালোবাসার মধ্যে কোনো ভেজাল নেই, নেই কোনো মলিনতা। যেকোনো পরিস্থিতি হোক না কেন, মায়েরা সবসময় তাদের সবকিছু বিলিয়ে দেয়। পৃথিবীতে সবাই আপনাকে ভালোবাসবে, সেই ভালোবাসার মাঝে যে কোনো প্রয়োজন লুকিয়ে থাকে। কিন্তু একজন ব্যক্তি কোনো প্রয়োজন ছাড়াই আপনাকে ভালোবাসবে, সে হলো মা। মায়ের কোল যে কত বড় জিনিস তা একজন যোগ্য সন্তান ছাড়া আর কেউ জানে না । শত চিন্তা আপনার মাথায়, একবার মায়ের কোলে মাথা রেখে দেখবেন সব চিন্তা দূর হয়ে যাবে । পৃথিবীর যেখানেই যান না কেন মায়ের কোলে যে শান্তি তা কোথাও খুজে পাবেন না ।
আমি সবার উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলবো যে বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিমাপ করতেও পারে না। পরিবারের মেরুদন্ড হয়ে দায়িত্ব পালনে, সন্তান-সংসার পরিচালনায় ব্রতি যিনি, শাসনে কঠোর, ভালোবাসায় কোমল, স্নেহে উদার, ত্যাগে অগ্রগামী যিনি, তিনি বাবা। বাবারা যেকোন ধরনের দুঃখ-কষ্ট একাই সহ্য করেন। সব সময় চেষ্টা করেন দুঃখ- কষ্ট যেন সন্তানদের স্পর্শ না করে। সন্তানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। বাবা হোল বট গাছের মতো, ঝড়ঝাপটা সংসারে যাই আসুক নিজে অবিচল থেকে রক্ষা কবচের মত একা সামলে রাখে ।
যখন আমরা কিছুই বলতে পারতাম না, মা আমাদের সব মনের কথা বুঝে যেত। আজ আমরা কত কিছু বলি আর তার শেষে বলি,”এসব তুমি বুঝবে না” সত্যি কি তাই? একমাত্র মা-ই সেটা বুঝতে পারে যেটা তার সন্তান কখনই বলে উঠতে পারে না। মা! এই একটা শব্দ আমাদের জীবনের সমান। আমাদের জীবনে মা একটা এমন জায়গা যা আমরা ঠিক সুস্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারিনা। মা আমাদের সেই গাছ তলা যেখানে জীবনের কঠোর তপ্ত রোদের মধ্যে একফালি ছায়া, যেখানে আমরা চলার পথে কিছুটা বিশ্রাম পাই। এমন কোনো অনুভূতি নেই যা আমাদের মায়েরা আমাদের জীবন সম্পর্কে জানেনা বা তার জন্য আমাদের সঠিক সমাধান বলে দিতে পারে না ।
মানুষ হচ্ছে মোমবাতির মতো। আর মোমবাতির জ্বলন্ত আগুন হচ্ছে মানুষের আয়ু। মোমবাতির গলে যাওয়া প্রতিটা ফোঁটা হচ্ছে মানুষের দিন। যা কিনা অনবরত: শেষ হয়ে যাচ্ছে।একটা সময় গলতে গলতে পুরো মোমবাতি যেভাবে শেষ হয়ে যায়,ঠিক সেভাবে একটা একটা দিন যেতে যেতে মানুষের আয়ুও চলে যায়। অনেক সময় দেখা যায় পুরো মোমবাতি গলার আগেই অর্ধেক থাকা অবস্থায় দমকা বাতাসে নিভে যেতে পারে। পার্থক্য শুধু এতটুকুই- দমকা বাতাসে নিভে যাওয়া মোমবাতি আবার আগুন দিয়ে জ্বালানো যায়, কিন্তু মানুষের জীবন প্রদীপ একবার নিভে গেলে তা আর কখনই জ্বালানো সম্ভব নয়। তাই আসুন আমরা বাবা-মায়ের জীবনের প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগে এই মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ এবং সহজ কাজ, তাদের যথাযোগ্য শ্রদ্ধা ও সন্মান করি।
এখানে বর্ণিত হয়েছে বাবা- মা সম্পর্কিত কথা এবং সেই সব মা – বাবাদের অজানা ও অল্প জানা বিভিন্ন কাহিনী, যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে এবং সমাজকে মানবিক গুণে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
Reviews
There are no reviews yet.